ভার্মি কম্পোষ্ট বা কেঁচো সার বানিজ্যিক উৎপাদনঃ
বর্জ্য প্রকৃতপক্ষে অযত্নে ফেলে রাখা সম্পদ। কৃষি-কার্য, পশুপালন প্রভৃতি থেকে প্রচুর পরিমাণে জৈব-বস্তু পাওয়া যায়, যা ঘরেরকোণে পড়ে থেকে পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এই জৈব বস্তুকেই আমরা সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে সার তৈরী করে তাতে মূল্য যুক্ত করতে পারি। এর প্রধান লক্ষ্য হল জৈব বর্জ্য মিশিয়ে জমির পুষ্টির জন্য উন্নত মানের জৈব সার তৈরী করা।
সম্পূর্ণ জৈব-সারের প্রকোষ্ঠ থেকে প্রক্রিয়াকরণের পূর্বের বর্জ্য প্রকোষ্ঠে কেঁচোদের যাতায়াতের সুবিধা করার জন্যই চারটি প্রকোষ্ঠযুক্ত গর্ত বা ট্যাঙ্ক তৈরী করা হয়।
বিভিন্ন প্রজাতির স্থানীয় কেঁচো ব্যবহার করে মিশ্র জৈব সার প্রস্তুতিঃ
সারা পৃথিবীতে প্রায় ২৫০০ প্রজাতির কেঁচো সনাক্ত করা গেছে। বিভিন্ন ধরণের মাটির সাথেই কেঁচোর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয় তাই স্থানীয় মাটিতে সেই স্থানের কেচোঁর সাহায্যেই জৈব সার তৈরী একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বাইরে থেকে কেঁচো নিয়ে আসার কোন প্রয়োজন নেই। পেরিওনিক্স এক্সক্যাভ্যাটাস ও ল্যাম্পিটো মৌরিটোই এই দুইধরণের কেঁচোই সাধারনতঃ ব্যবহৃত হয়। এই কেঁচো চাষ করা যায় এবং মিশ্রসার প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয় কিছু সাধারণ পদ্ধতি অবলম্বন করে। বড় গর্ত, ট্যাংক বা কংক্রিটের বৃত্তাকার পাত্র অথবা যে কোন বড় পাত্রে কেঁচোর প্রজনন ঘটিয়ে কেঁচো চাষ করা যায়।
কেঁচোর বৈশিষ্ট্য:- কেঁচোর সার তৈরি করতে নির্দিষ্ট প্রজাতির কেঁচো বেছে নেওয়ার জন্য তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে নেওয়া আবশ্যক। যেমনঃ
১) শীত ও গ্রীষ্ম উভয় আবহাওয়াতে বেঁচে থাকার ক্ষমতা।
২) সব রকম জৈব বস্তু থেকে খাবার গ্রহণ করার সামর্থ্য।
৩) কেঁচো যেন রাক্ষুসে প্রকৃতির হয়, অর্থাৎ প্রচুর আহার করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
৪) অন্যান্য প্রজাতির কেঁচোর সাথে মিলেমিশে বাস করা।
৫) জৈব দ্রব্য পাওয়ার সাথে সাথে বা অল্প সময়ের মধ্যে সক্রিয় হয়ে ওঠা এবং সেখান থেকে খাবার সংগ্রহ করা।
৬) রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা এবং প্রতিকুল অবস্থানে নিজেদেরকে মানিয়ে নেওয়া।
৭) দ্রুততার সাথে বংশ বিস্তার করা এবং শারীরিক বৃদ্ধি ঘটানো।
কিভাবে স্থানীয় কেঁচো সংগ্রহ করা যায়-
এমন মাটি সনাক্ত করতে হবে যেখানে কেঁচো দৃশ্যমান। ৫০০ গ্রাম গুড় এবং ৫০০ গ্রাম তাজা গোবর ২ লিটার জলে দ্রবীভূত করে ১মি x ১মি এলাকায় মাটির উপরিতলে ভালোভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। খড়ের ডেলা এবং পুরানো চটের থলি দিয়ে জায়গাটা ঢেকে দিতে হবে। ২০ থেকে ৩০ দিন ক্রমাগত জল ছিটিয়ে যেতে হবে। এই জায়গাতেই একসাথে বহু কেঁচোর জন্ম হবে যাদের সহজেই সংগ্রহ এবং ব্যবহার করা যাবে।
মিশ্রসার তৈরী করা ও গর্ত বানানো-
প্রয়োজনানুযায়ী গর্ত তৈরী করে নেওয়া যেতে পারে বাড়ীর উঠোনে অথবা বাগানে বা মাঠে। একটি অথবা দুটি গর্ত করা যেতে পারে বা ইঁট ও চুন সুরকী দিয়ে যেকোন মাপের ট্যাংক, জল যাওয়ার জায়গা সহ তৈরী করে নেওয়া যেতে পারে। ২মি x ১মি x ০.৭৫মি হচ্ছে এই কাজের জন্য আদর্শ। জৈব ও কৃষি বর্জ্যের উপর নির্ভর করবে গর্তের মাপ। কেঁচোগুলিকে পিঁপড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য গর্তের মাঝ-বরাবর অস্থায়ী প্রাচীরে জল জমিয়ে রাখা যায়।
চারটি প্রকোষ্ঠযুক্ত গর্ত/ট্যাংক ব্যবস্থা-
সম্পূর্ণ জৈব-সারের প্রকোষ্ঠ থেকে প্রক্রিয়াকরণের পূর্বের বর্জ্য প্রকোষ্ঠে কেঁচোদের যাতায়াতের সুবিধা করার জন্যই চারটি প্রকোষ্ঠযুক্ত গর্ত বা ট্যাঙ্ক তৈরী করা হয়।
উপকরণ:- যে সব দ্রব্যকে কেঁচো সারে পরিণত করা যায় তা হলঃ
(১) প্রাণীর মল-গোবর, হাঁস-মুরগীর বিষ্ঠা, ছাগল-ভেড়ার মল ইত্যাদি। এগুলির মধ্যে গোবর উৎকৃষ্ট; মুরগীর বিষ্ঠায় প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফেট থাকে যা পরিমাণে বেশি হলে কেঁচোর ক্ষতি হতে পারে। তাই খড়, মাটি বা গোবরের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা ভাল।
(২) কৃষিক বর্জ্য-ফসল কাটার পর পড়ে থাকা ফসলের দেহাংশ যেমন-ধান ও গমের খড়, মুগ, কলাই, সরষেও গমের খোসা, তুষ, কান্ড, ভুষি, সব্জির খোসা, লতাপাতা, আখের ছোবড়ে ইত্যাদি।
(৩) গোবর গ্যাসের পড়ে থাকা তলানি বা স্লারী (Slurry)।
(৪) শহরের আবর্জনা এবং
(৫) শিল্পজাত বর্জ্য যেমনঃ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা বর্জ্য। যে সব বস্তু ব্যবহার করা উচিত নয়, তা হলঃ পেঁয়াজের খোসা, শুকনো পাতা, লংকা, মসলা এবং অম্ল সৃষ্টিকারী বর্জ্য যেমনঃ টমেটো, তেঁতুল, লেবু , কাঁচা বা রান্না করা মাছ মাংসের অবশিষ্টাংশ ইত্যাদি। এছাড়া অজৈব পদার্থ যেমনঃ পাথর, ইটের টুকরা, বালি, পলিথিন ইত্যাদি।
স্থান নির্বাচন:- সার তৈরী করতে প্রথমে ছায়াযুক্ত উঁচু জায়গা বাছতে হবে, যেখানে সরাসরি সূর্যালোক পড়বে না এবং বাতাস চলাচল করে। উপরে একটি ছাউনি দিতে হবে। মাটির পাত্র, কাঠের বাক্র, সিমেন্টের পাত্র, পাকা চৌবাচ্চা বা মাটির উপরের কেঁচো সার প্রস্তুত করা যায়। লম্বা ও চওড়ায় যাই হোকনা কেন উচ্চতা ১-১.৫ ফুট হতে হবে। পাত্রের তলদেশে ছিদ্র থাকতে হবে যাতে কোনভাবেই পাত্রের মধ্যে জল না জমে। একটি ৫´ ৬" ও ৩´ ২" চৌবাচ্চা তৈরী করে নিতে পারলে ভাল হয়।
প্রস্তুত প্রণালী:- প্রথমে চৌবাচ্চা বা পাত্রের তলদেশে ৩ ইঞ্চি বা ৭.৫ সেমি ইঁটের টুকরা, পাথরের কুচি ইত্যাদি দিতে হবে। তার উপরে ১ ইঞ্চি বালির আস্তরণ দেওয়া হয় যাতে পানি জমতে না পারে। বালির উপর গোটা খড় বা সহজে পচবে এরকম জৈব বস্তু বিছিয়ে বিছানার মত তৈরি করতে হয়। এর পর আংশিক পঁচা জৈব দ্রব্য (খাবার) ছায়াতে ছড়িয়ে ঠান্ডা করে বিছানার উপর বিছিয়ে দিতে হবে। খাবারে পানির পরিমাণ কম থাকলে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে যেন ৫০-৬০ শতাংশ পানি থাকে। খাবারের উপরে প্রাপ্ত বয়স্ক কেঁচো গড়ে কেজি প্রতি ১০ টি করে ছেড়ে দিতে হবে। কেঁচোগুলি অল্প কিছুক্ষণ স্থির থাকার পর এক মিনিটের মধ্যেই খাবারের ভেতরে চলে যাবে। এরপর ভেজা চটের বস্তা দিয়ে জৈব দ্রব্য পুরাপুরি ঢেকে দেওয়া উচিত। বস্তার পরিবর্তে নারকেল পাতা ইত্যাদি দিয়েও ঢাকা যেতে পারে। মাঝে মাঝে হালকা পানির ছিটা দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে অতিরিক্ত পানি যেন না দেওয়া হয়। এভাবে ২ মাস রেখে দেওয়ার পর (কম্পোস্ট) সার তৈরি হয়ে যাবে। জৈব বস্তুর উপরের স্তরে কালচে বাদামী রঙের, চায়ের মত দানা ছড়িয়ে থাকতে দেখলে ধরে নেওয়া হয় সার তৈরি হয়ে গেছে। এই সময়ে কোন রকম দুর্গন্ধ থাকে না। কম্পোস্ট তৈরি করার পাত্রে খাবার দেওয়ার আগে জৈব বস্তু, গোবর, মাটি ও খামারজাত সার (FYM) নির্দিষ্ট অনুপাত (৬ : ৩ : ০.৫ : ০.৫) অর্থাৎ জৈব আবর্জনা ৬ ভাগ, কাঁচা গোবর ৩ ভাগ, মাটি ১/২ ভাগ এবং খামার জাত সার (FYM) ১/২ ভাগ, মিশিয়ে আংশিক পচনের জন্য স্তুপাকারে ১৫-২০ দিন রেখে দিতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পর ঐ মিশ্রিত পদার্থকে কেঁচোর খাবার হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সাধারণভাবে, একটি ১ মিটার লম্বা, ১ মিটার চওড়া ও ৩ সেমি গভীর আয়তনের গর্তের জন্য ৪০ কিলোগ্রাম খাবারের প্রয়োজন হয়। এরকম একটি গর্তে এক হাজার কেঁচো প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রথম দিকে কম্পোস্ট হতে সময় বেশি লাগে (৬০-৭০ দিন)। পরে মাত্র ৪০ দিনেই সম্পন্ন হয়। কারণ ব্যাক্টেরিয়া ও কেঁচো উভয়েরই সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে। তথ্য অনুসারে ১ কেজি বা ১০০০ টি কেঁচো, ৬০-৭০ দিনে ১০ কেজি কাস্ট তৈরি করতে পারে। এক কিলোগ্রাম কেঁচো দিনে খাবার হিসাবে ৫ কিলোগ্রাম সবুজসার (& Green leaf manure) খেতে পারে। তার জন্য ৪০-৫০ শতাংশ আর্দ্রতার বজায় রাখা আবশ্যক। প্রায় ৮০০-১০০০ কেঁচোর ওজন হয় ১ কিলোগ্রাম। এই পরিমাণ কেঁচো সপ্তাহে ২০০০-৫০০০ টি ডিম বা গুটি (Cocoon) দেয়। পূর্ণাঙ্গ কেঁচোর জন্ম হয় ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে।
মিশ্রসার প্রস্তুত কখন সম্পন্ন হবে?
১। যখন পদার্থগুলি সামান্য ঝুরঝুরে হয়ে যাবে এবং মিশ্র সারের রঙ গাঢ় বাদামী হয়ে যাবে তখন-ই মিশ্রসার প্রস্তুত সম্পন্ন হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। দানাদার, কালো, হাল্কা এবং বোঁদযুক্ত হবে।
২। ৬০-৯০ দিনের মধ্যেই (গর্তের আকৃতির উপর নির্ভর করবে) মিশ্রসার প্রস্তুত সম্পন্ন হবে। উপরের বেডে কেঁচোর উপস্থিতিতেই তা বোঝা যাবে। এখন গর্ত/পাত্র থেকে এই কেঁচোর মিশ্র-সারের চাষ করা যাবে।
৩। মিশ্র-সার থেকে কেঁচোগুলিকে আলাদা করার জন্য বেড খালি করার ২-৩ দিন আগে জল দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এর ফলে প্রায় ৮০% পোকা নীচে চলে যাবে।
৪। ঝাঁঝরি বা চালুনি দিয়েও কেঁচোদের আলাদা করা যায়। কেঁচো এবং সামান্য পুরু পদার্থ যা ঝাঁঝরির উপরে থেকে যাবে তাকে আবার গর্তে ফেলে দিতে হবে যেখানে পুনরায় পদ্ধতিটি শুরু হবে। মিশ্রসারের গন্ধ মাটির মত। যেকোন খারাপ গন্ধ এটাই প্রমাণ করে পচন প্রক্রিয়া শেষ হয়নি এবং ব্যাক্টিরিয়ার কার্য-ক্রিয়া চালু আছে। ছাতা-ধরা বা বাসীগন্ধের মানে নাইট্রোজেন বেরিয়ে যাচ্ছে। যদি এমন ঘটে তাহলে বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে এবং আরও বেশী করে তন্তু জাতীয় পদার্থ যোগ করতে হবে এবং শুষ্ক রাখতে হবে। এরপরে মিশ্রসারকে ছেঁকে নিয়ে প্যাকেট করতে হবে।
৫। উত্পন্ন পদার্থ বোঝাই করে সূর্যের আলোয় রাখতে হবে যাতে বেশীরভাগ পোকা বেরিয়ে যায়।
৬। দুই বা চার প্রকোষ্ঠ যুক্ত ব্যবস্থায় প্রথম প্রকোষ্ঠে জল দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে যাতে পোকাগুলি নিজের থেকেই এক প্রকোষ্ঠ থেকে অন্য প্রকোষ্ঠে চলে যায় যেখানে উপযুক্ত পরিবেশ নিয়মিত ভাবে রক্ষা করা হয় এবং ফসল উত্পাদন-ও নিয়মিত হতে থাকে।
কেঁচো দিয়ে মিশ্র-সার প্রস্তুতির সুবিধা-
জৈব-সার কেঁচোর দ্বারা ক্রমাগত ভেঙে বা বিভিন্ন টুকরোয় ছড়িয়ে দেওয়া যায় যার ফলে উন্নত গঠনের স্থায়ী বিষহীন পদার্থ তৈরী হয় যার উচ্চ আর্থিক মূল্য আছে এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য ভালো মানের কন্ডিশনার হিসাবে কাজ করে এই ভাবে মিশ্রসার তৈরীর ফলে মাটিতে খনিজ পদার্থের সাম্যতা বজায় থাকে, পুষ্টি সরবরাহ বাড়ায় এবং জটিল সার দানা হিসাবে কাজ করে। রোগসৃষ্টিকারী অনুজীবের সংখ্যা হ্রাস পায়। পরিবেশগত সমস্যা হ্রাস পায়এই কথা ভালোভাবেই বোঝা দরকার যে কেঁচোর দ্বারা মিশ্র-সার প্রস্তুতি নিম্নমধ্যবিত্তদের একটি উপকারী কুটির শিল্প এবং পরিপূরক আয়ের উত্স।
কোঁচো সার উৎপাদনের আয় ও ব্যয়ের হিসাবঃ
প্রথম বছর
বিষয়/বস্তু --------------------------------পরিমাণ ---------মূল্যহার -----------মোট মূল্য
১) চৌবাচ্চা নির্মাণ-(৫´ x ৩´ x ১.৫´) -----৪ ------------২০০০----------- ৮০০০
২) ছাউনী ------------------------------------- ১ ------------১০০০----------- ১০০০
৩) কেঁচো সংগ্রহ -----------------------------৪০০ ----------২৫০/হাজার-------১০০০
৪) গোবর ও আবর্জনা সংগ্রহ----------------- ৮ টন ----------৫০০/টন --------৪০০০
-----------------------------------------------------------------------------
মোট ----------------------------------------------------------------১৪০০০
দ্বিতীয় বছর
১) গোবর ও আবর্জনা সংগ্রহ -----------------১২ টন -----------৫০০/টন --------৬০০০
মোট -------------------------------------------------------------------৬০০০
চৌবাচ্চা নিমার্ণের আনুমানিক খরচের বিবরণ-
এরকম একটি চৌবাচ্চা নিমার্ণের আনুমানিক খরচের বিবরণ নিন্মে দেওয়া হলঃ
বিষয়/বস্তু -----------পরিমাণ ---------------মূল্যহার (টাকা) -----------মোট মূল্য (টাকা)
১) ইট -------------২০০টি ------------------৬ -------------------------১২০০
২) মাটি ---------------৫০০ সি.ফিট -----------৪----------------------- ২০০০
৩) সিমেন্ট ------------১ বস্তা -----------------৩৫০---------------------- ৩৫০
৪) বালি ---------------৮ বস্তা -----------------১০০---------------------- ৮০০
৫) মিস্ত্রী ও শ্রমিক -----১+১ --------------------৩০০+১৫০--------------৪৫০
৬) বাশঁ /কাঠের খুঁটি -----৬ টি -----------------৬০---------------------- ৩৬০
৭) খড় -------------------২ কুইঃ ---------------২০০০------------------ ২০০০
৮) শ্রমিক ----------------২ জন ----------------১৫০---------------------- ৩০০
৯) তার -------------------৬ কেজি --------------৫০---------------------- ৩০০
------------------------------------------------------------------------
মোট ------------------------------------------------------------৭৭৬০
আয়-
প্রথম বছর চারটি (৫´ x ৩´ x ১.৫´) চৌবাচ্চা থেকে ৮ টন জৈব আবর্জনা থেকে সহজেই ২ টন কেঁচো সার উৎপাদন করা সম্ভব। অর্থাৎ প্রতি কেজি২০ টাকা হিসাবে ২ টন কেঁচো সার থেকে প্রথম বছর ৪০,০০০ টাকা বিক্রয় হবে। দ্বিতীয় বছর উৎপাদন হার আরো বৃদ্ধি পাবে কারণ কেঁচোর সংখ্যা কয়েক গুন বেড়ে যাবে এবং স্বল্প সময়েই (৪৫ দিনে) সার উৎপাদন সম্ভব হবে। দ্বিতীয় বছর ১২ টন আবর্জনা থেকে ৩ টন কেঁচোসার উৎপাদন করা যাবে। অর্থাৎ দ্বিতীয় বছর মোট বিক্রয় হবে ৬০,০০০ টাকা। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কেঁচোসার করতে গেলে একটি ছাউনির নীচে (৫´ x ৩´ x ১.৫´) মাপের ৫-৬ টি চৌবাচ্চায় নুন্যতম ২০০০টি কেঁচো ছাড়লে ৪০০ কেজি আবর্জনা থেকে ৫০-৬০ দিনের মধ্যে ১০০ কিলোগ্রাম কেঁচোসার বিক্রি করে গ্রামের যুবকেরা সহজেই স্বনির্ভর আয়ের সংস্থান করতে পারেন। বর্তমানে প্রেক্ষাপটে এ দেশের সরকার সারের উপর বিশাল অংকের ভর্তুকি দেওয়ার পরও ইউরিয়া-১২ টাকা, এম.পি-২৪ টাকা ও টি.এস.পি-২৬ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে। আবার অনেক সময় অতি উচ্চ মূল্য দিয়েও সময়মত ও পরিমান মতো সার কৃষকের হাতে পৌঁছায় না। এ জন্য আমরা যাদ ভার্মি-কম্পোস্ট বা কেঁচো সার কৃষকদের/যুবকদের সচেতনতার মাধ্যমে তৈরি করতে পারি, তাহলে রাসায়নিক সারের উপর চাপ অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। সাথে সাথে উৎপাদনকারীর আয়ের পথ খুজে পাবে, যাতে করে সে স্বনির্ভর হতে পারে।
ভার্মিকম্পোস্টের ব্যবহার-
ভার্মিকম্পোস্ট সব প্রকার ফসলে যে কোন সময়ে (any stage of the crop growth) ব্যবহার করা যায়। সবজি এবং কৃষি জমিতে ৩-৪ টন প্রতিহেক্টরে ও ফল গাছে গাছ প্রতি ৫-১০ কিলোগ্রাম হারে ব্যবহার করা হয়। ফুল বাগানের ক্ষেত্রে ব্যবহারের পরিমাণ আরো বেশি ৫-৭.৫ কুইন্টাল এক হেক্টর জমিতে। জমির স্বাস্থ্য ও উর্বরতা বজায় রাখার জন্য জৈব সার ব্যবহারের প্রবণতা ক্রমশঃ বাড়ছে। এদেশের মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন এ ব্যাপারে। তাই ভার্মি-কম্পোস্ট উৎপাদন ও তার ব্যবহার এক মূলবান ভুমিকা পালন করতে চলেছে আগামী দিনগুলি।
সংগ্রহীত।